গ্রামাঞ্চলে এক সময় একটা নিয়ম প্রচলিতছিল, শিশুর দাঁত উঠার খবর পাওয়ার সাথে সাথে নানার বাড়ির লোকজন ও পড়শীরা আশীর্বাদ করতে আসত, সাথে নিয়ে আসত বিচিত্র ধরনের পিঠা-যা ‘দাঁত পিঠা’ নামে পরিচিত। আবার ঢাকাবাসীদের মধ্যে পান-মিষ্টি বিতরনের ধুম পড়ে যেত। কিভাবে কখন এ নিয়ম চালু হয় অথবা কেনই বা আজ এই নিয়ম লুপ্তপ্রায় তা বিষয় নয়; মাড়ি ভেদ করে একটি বা দুটি দাঁত যখন দৃষ্টি গোচর হয় তখনকার সৌন্দর্য্যে। বিকাশটুকু এত আনন্দের কারণ হতে পারে। দাঁত উঠার পর থেকে শিশুদের সৌন্দর্য বাড়তে থাকে। তাদের মুখে হাসি দেখতে আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে থাকি। বয়সের এক পর্যায়ে সাদা ধবধবে দাঁতে দুটি পাটি পূর্ণ হয়। কিন্তু বাবা-মা’র চোখকে ফাঁকি দিয়ে সোন্দর্য্য প্রতীক এই দাঁতগুলোর পার্শ্বে বা উপরে এক সময় গর্ত হতে থাকে। ঠিক এই সময় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না আর তাই চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়ারও প্রয়োজন অনেক অভিভাবক মনে করেন না। যার ফলে এ বিন্দু আকৃতির গর্ত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। শুরুহয় প্রচন্ড ব্যথা, মুখ ফুলে যায় এবং পুঁজ বের হয়। এই সময় দাঁত ফেলে দেওয়া ছাড়া একজন চিকিৎসকের তেমন কিছু করার থাকে না। দুধ দাঁত উঠা শুরু হয় ছয় মাস বয়স থেকে এবং দুই বৎসর বয়সের মধ্যে। উপরের পাটিতে দশটি ও নিচের পাটিতে দশটি করে মোট বিশটি দুধ দাঁত উঠে। উপরের নিচের পাটির এই বিশটি দুধ দাতকে অপসারন করার লক্ষে চোয়ালের ভিতর ধীরে ধীরে স্থায়ী দাত বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্থায়ী দাঁত যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে দুধ দাঁত মূলের দিক থেকে ততই ক্ষয় প্রাপ্ত হতে থাকে। স্থায়ী দাঁত বৃদ্ধি পাওয়ার এক পর্যায়ে যখন দুধ দাঁতের সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ মূল ক্ষয় হয়ে যায় তখন দুধ দাঁত মাড়িতে অবস্থান করার মতো ভিত্তি হারিয়ে নড়বড়ে হয়ে যায়। আর এটি হলো নড়বড়ে দুধ দাঁতটি উত্তোলন করার নির্দিষ্ট বয়স। দুধ দাঁত উত্তোলনের পর ধীরে ধীরে এই শুন্য স্থানে স্থায়ী দাত দৃষ্টিগোচর হয়। শূন্য স্থানটি স্থায়ী দাতের তুলনায় ছোট হলে স্থায়ী দাঁতটি বাঁকা হয়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে বিলম্ব না করে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রত্যেকটি দুধ দাঁতকে অপসারণ করে স্থায়ী দাঁত উঠার নির্দিষ্ট বয়স রয়েছে। যা ছয় বছর বয়স থেকে শুরু হয়ে বার বছর বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে। কোন দুধ দাঁতের স্থানে স্থায়ী দাঁত উঠার নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বে যদি ঐ দুধ দাঁত ফেলে দেয়া হয় তাহলে স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় দুধ দাঁতের পিছন দিয়ে অথবা পার্শ্ব দিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুধ দাঁতটি বৃদ্ধি পেলে এমন হতে পারে। এসবক্ষেত্রে অবশ্যই মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট দুধ দাঁতটি উৎপাটনের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যথায় স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দুধ দাঁত উঠার পর থেকে যে যত্নগুলো নেয়া উচিতঃ-
প্রতিদন অন্তত একবার ছোট নরম টুথ ব্রাশ দিয়ে অভিভাবক নিজেই। বাচ্চার দাঁত ব্রাশ করে দিতে হবে।
দাঁতের কোন অংশ ক্ষয় প্রাপ্ত হতে দেখলে অথবা কালাে দাগ দেখলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
দুধ দাঁত, কিছুদিন পর তো পড়েই যাবে” এই ধারণা পোষন না করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে নিতে হবে।
ছয় বছর বয়সে দুধ দাঁতগুলোর সর্বশেষ প্রান্তে উপরের ও নিচের চোয়ালে প্রতি পার্শ্বে একটি করে যে চারটি স্থায়ী দাঁত উঠে ঐ দাঁতগুলোর প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
এ কথা সত্য যে, মুখ ও দন্তরোগের ব্যাপারে আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোক উদাসীন, যার ফলশ্রুতিতে নিজেরা যেমন দন্তরোগে ভোগেন তেমনি শিশুদেরও শিকার হতে হয় ঐ উদাসীনতার। অথচ নির্দিষ্ট বয়সে মুখ ও দন্তরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে কিছুটা যত্ন নেয়া হলে বৃদ্ধ বয়সেও সুন্দর শক্তিশালী দু’পাটি দাঁত নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।