মুখের চারপাশে কিংবা মুখের ভেতরের কোন অংশে যেমন ঠোঁটে , জিহ্বায়, দাঁতের মাড়িতে কিংবা তালুতে যে ক্যান্সার হয় তাকেই ওরাল ক্যান্সার বলে ।
এই ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না । তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী বলে গন্য করা হয়:
✍️ ধূমপান করলে কিংবা পান-জর্দা বেশি খেলে এই ক্যান্সার হবার প্রবণতা বেশি থাকে ।
✍️ ভাঙ্গা দাঁতের সাথে জিহ্বার ঘর্ষণের ফলে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় সেখান থেকেও ওরাল ক্যান্সার হতে পারে ।
✍️ সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকেও ওরাল ক্যান্সার হতে পারে ।
✍️ এক ধরনের ভাইরাস ( হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ) এর মাধ্যমেও অনেক সময় মুখমন্ডলের ক্যান্সার হতে পারে। ।
✍️ এছাড়াও কিছু জেনিটিক কারনেও মুখমন্ডলের ক্যান্সার হতে পারে ।
ওরাল ক্যান্সারের লক্ষণ:
👉 মুখে বা জিহ্বায় কোন ঘা যদি ১/২ সপ্তাহের মধ্যে অনেক বড় হয়ে যায় তাহলে তা মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
👉 কোন মাংসপিণ্ড খুব দ্রুত বড় হচ্ছে কিংবা মুখে বা ঠোঁটের কোন অংশ অবশ হয়ে যাচ্ছে, এমন হলেও মুখের ক্যান্সারের আশংকা করা হয়।
👉 অনেক সময় জিহ্বায় ক্যান্সার হলে রোগী খেতে পারেনা অথবা খেতে অনেক কষ্ট হয়।
ওরাল ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায়ঃ
একজন ডেন্টিস্ট কিংবা একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান যদি রোগীকে সাধারণ চিকিৎসা দেয়ার সময় মুখের ভেতরে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেন তাহলেই কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে যায় । অস্বাভাবিকতা পেলে তিনি একজন মেক্সিলোফেশিয়াল সার্জনের কাছে রোগীকে রেফার করতে পারেন । যেমন কোন ঘা, সাদা , কালো বা লাল দাগ দেখেন অথবা গালের ভিতরে নরম অংশগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে মনে করেন তাহলে রোগীকে একজন ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে পাঠানো জরুরী।
✔ যদি মাংসপিণ্ড ছোট হয় তাহলে সম্পূর্ণটাই কেটে নিয়ে পরীক্ষা করতে দেয়া হয় এবং যদি মাংসপিণ্ড বড় হয় তাহলে সম্পূর্ণটা না কেটে ছোট কিছু অংশ কেটে নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
✔ যদি মুখের ভেতরের কোন টিস্যুতে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সুঁই দিয়ে সেখান থেকে কিছু কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হয় ।
✔এছাড়াও ক্যান্সার জিহ্বায় বা হাড়ে কতটুকু স্থানে ছড়িয়ে পড়লো তা নির্ণয়ের জন্য এমআরআই কিংবা সিটি স্ক্যান করা হয় ।
✔ক্লিনিকাল ডায়াগনোসিস কে প্রাধান্য দিয়ে পরবর্তীতে হিস্টোপ্যাথোলজি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নিশ্চিত করা হয় ।
ওরাল ক্যান্সার নিশ্চিত হবার পর চিকিৎসা:
👍 যদি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করা যায় এবং সামান্য জায়গা জুড়ে ক্যান্সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাহলে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ ও চতুর্দিকের কিছু অংশ কেটে ফেলে দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় ।
👍 আর যদি অনেক বেশি জায়গা জুড়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে দিয়ে শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে (হাত বা পা) চামড়া কিংবা মাংস এনে পুনর্গঠন করে দেয়া হয়।
👍 অনেক সময় চিকিৎসা বিলম্বের কারনে মুখমন্ডলের ক্যান্সার মস্তিষ্কের দিকে, গলার দিকে বা কানের দিকে অতিরিক্ত ছড়িয়ে গেলে অপারেশন এর মাধ্যমে ক্যান্সার সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কোন কোন সময় রেডিওথেরাপী বা ক্যামোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
অধ্যাপক ডাঃ নাসির উদ্দিন
ওরাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ওরাল এবং ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ঢাকা, বাংলাদেশ