দাঁত নিয়ে মানুষের চিন্তার শেষ নাই। আর এই দাঁত নিয়ে মানুষের চিন্তা আর বেড়ে যায় ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করলে বা ঠিক সময় স্কেলিং না করলে। বিশেষ করে দাঁতের স্কেলিং করা নিয়ে অনেকেই সঠিক নিয়ম জানেন না কিংবা বিষয়টি হেলায় ফেলায় দেখেন এবং প্রচলিত অনেক গুজব আমলে নিয়ে দাঁতের স্কেলিং করা থেকে বিরত থাকেন। একটা সময় এই পরিণাম ভোগ করতে হয়। ব্রাশ করার পরেও অবশিষ্ট খাদ্য কনা / ডেন্টাল প্লাক জমতে থাকে। সময়ের সাথে ডেন্টাল প্লাক ডেন্টাল ক্যালকুলাস বা পাথরে এ রূপান্তর হয়।এই পাথর দাঁতের গোড়া থেকে সরানোর জন্য দরকার ডেন্টাল স্কেলিং।
স্কেলিং কি?
দাঁত ও মাড়ির মাঝে অনেক খাবার আটকে থাকে। নিয়মিত ব্রাশ করলে সেটা চলেও যায়। কিন্তু যদি এই সামান্য খাবারের অংশ লেগে থাকা অবস্থায় ব্রাশ না করা হয়, তাহলে সেটা কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। একে বলে প্লাক। এই কিছুটা শক্ত হয়ে যাওয়া প্লাকের কিছু অংশ পরে ব্রাশের সঙ্গে উঠতে চায় না। আর প্রত্যেকবার এ রকম একটু একটু প্লাক জমে শক্ত হয়ে তৈরি হয় ক্যালকুলাস বা পাথর। ক্যালকুলাসকে পরিষ্কার করার প্রসেসের নামই হলো স্কেলিং। এটি সাধারণত আল্ট্রাসনিক মেশিনে করা হয়
দাঁতের স্কেলিং নিয়ে প্রচলিত ৬ টি ভুল ধারণা
১/ বছরে একবার বা দুবার স্কেলিং করতে হয়: এটি ভুল ধারণা। স্কেলিং একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক করতে হবে। অনেক ভালো ওরাল হাইজিন মেনটেইন করেন এমন ব্যক্তির সাধারণত অনেক বছর পর স্কেলিং করা লাগে। আর যিনি ওরাল হাইজিনের প্রতি উদাসীন, তার স্কেলিংয়ের প্রয়োজন হবে বেশি। সহজ কথায়, চিকিৎসক যদি প্রয়োজন মনে করেন তবেই স্কেলিংয়ের জন্য বলেন। নিয়মিত ইন্টারভেলে স্কেলিং করানোর প্রয়োজন নেই।
২/ স্কেলিং করলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায়: এটিও ভুল ধারণা। আসলে যখন ক্যালকুলাস সরে যায়, তখন ক্যালকুলাসের দরুন দাঁত থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া মাড়ি আবার স্বাভাবিক জাগায় আসতে কয়েক দিন সময় লাগে। এ সময় ওই জায়গাগুলো জিহ্বায় ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় এবং ঠান্ডা পানিতে দাঁত শিরশির করে। কয়েক দিন পরই যখন মাড়ি স্বাভাবিক জায়গায় চলে আসে, তখন এই দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি ঠিক হয়ে যায়।
৩/ স্কেলিং করলে দাঁতের ক্ষতি হয়: স্কেলার মেশিনের মূল মেকানিজম হলো আল্ট্রাসনিক ভাইব্রেশন এবং স্কেলিং করার কিছু স্পেসিফিক নিয়ম আছে। এসব নিয়ম না মেনে স্কেলিং করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
৪/ স্কেলিংয়ে ব্যথা পাওয়া যায়: এটা আরেকটি ভুল ধারণা। স্কেলারের ভাইব্রেশনের জন্য স্কেলিংয়ের সময় শিরশির অনুভূতি হয়। তবে হ্যাঁ, ক্যালকুলাসের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয় তবে স্কেলিংয়ের সময় বেশি শিরশির করতে পারে। তাই সময়মতো স্কেলিং করানো উচিত। সমস্যা দেখা দিলেই বা অন্তত বছরে একবার ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করানো উচিত।
৫/ স্কেলিং করার কারণে দাঁত পাতলা হয়ে যায়: আসলে স্কেলিং করার পর পাথর যখন অপসারিত হয় তখন সব রোগীই মুখে সজীবতা অনুভব করেন আবার পাথর থাকার কারণে মুখে যে ভারি ভারি ভাব থাকত তা চলে গিয়ে রোগী হালকা অনুভব করতে থাকেন। এই অনুভূতিকেই অনেক রোগী বলে থাকেন তাঁর দাঁত পাতলা হয়ে গেছে।
৬/ স্কেলিং করার ফলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়: স্কেলিং এর সময় দাঁতের উপরের থাকা দাগ, দাঁতের মাঝে জমে থাকা পাথর গুলো বিশেষ আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়।সুতরাং এনামেলের ক্ষতির কোন প্রশ্নই আসে না। দাঁতের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চাইলে স্কেলিং এর কোন বিকল্প নেই। এবং দাঁতের স্কেলিং করাতে হলে অবশ্যই একজন দক্ষ ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। দাঁতে কোন অসুবিধা বোধ করলে অবহেলা না করে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন